এমন পরিবেশে তৈরি করা হয় নিম্নমানের বেকারি খাদ্য। ছবি: শহিদুল ইসলাম
মো.শহিদুল ইসলাম: গাজীপুর কোনাবাড়ী,কাশিমপুরে যত্রতত্র নিয়ম নীতি ছাড়া গড়ে উঠেছে বেকারী কারখানা।মেট্রোপলিটন কোনাবাড়ী এবং কাশিমপুর থানায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে প্রায় দুই ডজন বেকারী কারখানা। বেকারী গুলোতে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেকারী খাবার তৈরী হচ্ছে। উৎপাদিত খাদ্যের মান নির্ণয় ও পরিমাপ নিশ্চিতকরণ কোনো ব্যবস্থা নেই। উৎপাদিত খাবারে দেশের মান নিয়ন্ত্রণকারী একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন (বিএসটিআই) এর অনুমোদন সহ নেই উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ। খবর রাখেন না পরিবেশ অধিদপ্তর সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরোজমিনে অনুসন্ধানে জানা যায়, কোনাবাড়ী, কাশিমপুর এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রায় দুই ডজন বেকারী কারখানা। কারখানাগুলো নিয়ম নীতি না মেনে স্যাঁত স্যাঁতে নোংরা পরিবেশে ভেজাল ও নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে অবাধে তৈরি করছে বেকারী খাবার। অভিযোগ রয়েছে, এসব তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ, কেমিক্যাল ও নিন্মমানের পাম তেল।
শ্রমিকরা বিশেষ পোশাক ছাড়া খালি পায়ে এবং খালি গায়ে খাবার তৈরি করছেন। ব্যবহার হচ্ছে প্রতিটি ফ্যাক্টরিতে শিশুশ্রম। নোংরা ও অপরিস্কার কড়াইগুলোতে আটা ময়দা প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। ডালডা দিয়ে তৈরি করা ক্রিম রাখা পাত্রগুলোতে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছি ভন ভন করছে। উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ন তারিখ ছাড়াই বাহারি মোড়কে বনরুটি, পাউরুটি, কেক, বিস্কুট, চানাচুর, সিংগাড়া সামুচা, মিষ্টিসহ বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড উৎপাদন ও বাজারজাত করা হচ্ছে। বিভিন্ন চায়ের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, একাধিক পলি প্যাকে ঝুঁলছে পাউরুটি, ক্রীমরোল, কেক, পেটিস, সিঙ্গাড়াসহ অন্যান্য বেকারী খাবার। মোড়কের গায়ে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ লেখা থাকলেও কত তারিখে উৎপাদন হয়েছে বা মেয়াদ কবে শেষ হবে তার কোনো উল্লেখ নেই।
কোনাবাড়ী এলাকায়, মায়ের দোয়া বেকারি, চিশতিয়া বেকারি, ইমরান বেকারি, সুমাইয়া বেকারিসহ বেশ কয়েকটি বেকারী সরোজমিনে এমন তথ্য উঠে আসে। এ সকল বেকারীতে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা সহ জরিমানা আদায় করা হলেও তাদের এ সকল অপকর্ম বন্ধ হচ্ছে না। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিন্মমানের উপকরণ দিয়ে তৈরি করা এসব খাবার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ঝুঁকি।
কয়েকজন বেকারী শ্রমিক জানান, দিনের বেলায় তারা কোনো পণ্য উৎপাদন করেন না। ফজরের আগেই পণ্য উৎপাদন শেষ হয়ে যায়। রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের ঝাঁমেলা কম বলেই পণ্য উৎপাদন রাতেই শেষ করা হয়। তারা আরও বলেন, মাঝে মধ্যে স্যানিটারি অফিসার এসে ঘুরে চলে যায়।
বাইমাইল এলাকার চা দোকানদার বলেন, আমরা গরীব মানুষ, চা-পান বিক্রি করে সংসার চালাই। উৎপাদনের তারিখ দেখার সময় নাই আর আমরা এটা বুঝিও না ক্রেতারা তো আর এসব জিজ্ঞেস করে না।
গাজীপুর জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, খাদ্য নীতিমালা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এলাকার সচেতন মহলের আনেকেই জানান, বিষয়টি যাদের নজর দেওয়া দরকার তারাই দিচ্ছে না, আমরা আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
গাজীপুর ভোক্তা অধিকারের সহকারী পরিচালক, রিনা বেগম চলমান বার্তাকে জানান, আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে, আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরও পড়ুন >>গাজীপুরে পলাতক আসামী গ্রেফতার