মাহ্মুদুন্নবী জ্যোতি:
পার্কের পূর্ব গেটে গাড়ি থেকে নেমে সজীব আর সোমা বকুল তলার পাশে সেড-এর ভিতর গিয়ে বসে। দুপুরের তপ্ত রোদ ম্লান হতে শুরু করেছে। বৈকালিক রোদের স্নিগ্ধ রং ছড়াতে শুরু করেছে তখন। পার্কের ভিতর লাইন ধরে নানা বয়সী মানুষ হাঁটছে। কারো ডায়াবেটিকস্, কারো হৃদরোগ। কেউ আবার শরীরটাকে সুস্থ রাখার প্রাণান্ত চেষ্টায় ব্যপ্ত রয়েছে। কিন্তু এই মানুষগুলোর নিজের আত্মিকতাকে রোগমুক্ত করার চেষ্টা করতে খুব একটা দেখা যায় না। যে কারণে বিপথগামী অন্তরাত্মার প্রভাবে মানুষ হয়ে ওঠে অমানুষ। বিশুদ্ধ প্রেম ভুলে কলুষিত প্রেমে ডুবে থাকে সারাক্ষণ।
-কী ভাবছেন? সোমার প্রশ্নে সম্বিৎ ফিরে পায় সজীব।
-কিছু না। বলুন, কী যেন বলতে চাচ্ছেন?
-তার আগে একটা বিষয় খুব জানতে ইচ্ছে করছে। যদিও বলা ঠিক হবে কিনা জানি না। তবুও…
-কি বিষয়ে?
-আপনার বাসায়…
সোমার দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সজীব বলে, অনেক সময় আমরা অন্যের ব্যাপারে যা দেখি, তা হয়ত হয় না। আবার যা হয়, তা হয়ত দেখি না।
-কিন্তু, কেন?
-দেখুন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষগুলো নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করছেন। সর্বদা সর্বোচ্চ সচেষ্ট আছেন দেহটাকে সুস্থ রাখতে। কিন্তু মনের রোগ সারাতে এই মানুষগুলোরই রয়েছে প্রচন্ড অনীহা। অথচ মনের রোগই মানুষকে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে। এ রোগের কারণেই মানুষ হয়ে যায় প্রেমহীন। আমার পরিবারও এ রোগেই আক্রান্ত।
-তার মানে?
-প্রেম করতে হৃদয় লাগে। কিন্তু সেই প্রেম যদি সংসার জীবনে রূপ নেয়, তখন সেটাকে ধরে রাখতে প্রয়োজন অর্থ। আর সেখানেই বোধহয় আমি পুরোপুরি ব্যর্থ। ফলাফল, হাজার ভাগের এক ভাগ হয়ত আপনার চোখে ধরা পড়েছে। কিছুক্ষণ থেমে আবারো বলে, আমি বোধ হয় আপনাকে অনেক বেশি বলে ফেলেছি। থাক সেসব। এবার আপনি বলুন তো, কী যেন জানতে এসেছেন?
-আমি সাহিত্যের একজন পাঠক। সুদূর আমেরিকায় আমার অবসরের একমাত্র সঙ্গী এদেশের লেখকদের বই। আমি অনেক কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, লেখকের অনেকের জীবনী পড়েছি। এদের মধ্যে কবিদের জীবনী আমাকে বেশি আকর্ষণ করে। আমার খুব ইচ্ছে, যাঁরা কবিতা ও গল্প লেখেন, তাদের সম্পর্কে জানবো। চেষ্টা করব এদেশের একজন লেখকের জীবনী বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে।
-উদ্দেশ্যটা ভালো। কিন্তু সহজ না।
-মানে?
-সে থাক। আমি আপনাকে এ বিষয়ে খুব একটা সাহায্য করতে পারবো বলে মনে হয় না।
-কেন?
-কষ্টের জমিনে হয়ত ফুল ফোটে, সৌরভও ছড়ায়। কিন্তু তা হয় ক্ষণস্থায়ী। তাতে ভ্রমর আকৃষ্ট হলেও, আপনার পাঠক হয়ত আকৃষ্ট হবে না। আপনি আমাকে ক্ষমা করবেন। (চলবে)