রেজা চৌধুরী:
অব্যাহতভাবে বেড়েই চলেছে দেশে ঋণ খেলাপীর পরিমাণ। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের সময় ঋণ খেলাপীর পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের মার্চ মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই সরকারি ব্যাংকগুলোর। এছাড়া গত ১০ বছরে ব্যাংক খাত থেকে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ জালিয়াতি হয়েছে।
এই ঋণ খেলাপির সাথে হলমার্ক, বেসিক ব্যাংক, ফারমার্স ব্যাংক এবং দেশের অনেক শীর্ষ ব্যবসায়ীরা জড়িত। এই বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপীর কারণে কয়েক বছর ধরেই ব্যাংক খাতে চলছে চরম সংকট। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক বছর চেষ্টা করেও এই সংকট দূর করতে পারেনি।
ঋণ দেয়ার সময় প্রভাবশালী মহলের মদদ এবং ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোর প্রশাসনিক দুর্বতার জন্যই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে তৈরি হয়েছে তারল্যের সংকট। আর সে সংকটের কারণে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে।
চলমান বার্তার অন্যান্য খবর>>
ব্যাংকগুলোর মালিকানা দেখলেই বোঝা যায় যে এরা রাজনীতিপুষ্ট। বিশেষ করে সরকারি ব্যাংকের পরিচালক নিয়োগের ক্ষমতা তো সরকারেরই। নৈতিকভাবেই সেটা নিয়ন্ত্রিত হয়। এক্ষেত্রে যেটা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, নৈতিকভাবে মালিকানা বা নিয়োগ পেলেও ব্যাংক পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের পেশাদারিত্ব আছে কিনা। ব্যাংক পরিচালনায় পেশাদারিত্বের অভাব, ব্যবস্থাপনার ত্রুটি, কাঠামোগত দুর্বলতা, আর হস্তক্ষেপ সহ এই খাতে সুশাসনের অভাবকে অনেক বেশি দায়ী।
এই বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপির চরম মূল্য দিতে হচ্ছে দেশের গোটা অর্থনীতিকে। ব্যাংকে যখন টাকার পরিমাণ কমে যায় আমরা সেটাকে তারল্য সংকট বলি। যখন তারল্য সংকট হয় তখন ব্যাংকের ঋণ দেয়ার ক্যাপাসিটিটা কমে যায়। তখন যারা বিনিয়োগে যেতে চায় তারা ঋণ পায়না। তাই বিনিয়োগে যেতে পারে না। বিনিয়োগ কমে গেলে অর্থনীতির উপর নানা প্রভাব পরে। উন্নয়নের গতি শ্লথ হয়ে যায়। সেই সাথে কমে যায় চাকরির সুযোগ। যার ফলে বেড়ে বেকার সমস্যা।
এবার বাজেট পেশ করার সময় ব্যাংক খাতে সংস্কারে কথা আবারো উঠে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন ঋণ খেলাপিদের শাস্তি পেতেই হবে। এই খাতকে স্থিতিশীল করতে অর্থমন্ত্রীও বেশ কিছু প্রস্তাবনা দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন আবারো সংশোধন করা ও একটি কমিশন গঠন করা।
কেন্দ্রিয় ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ের যে কৌশল নিয়েছে, খেলাপিরা এই কৌশলে উল্টো ঋণ পরিশোধ না করার সুযোগ দিচ্ছেন। যার একটি হল বকেয়া ঋণের ২% টাকা জমা দিলে ঋণ পুন:তফসিল করা। এরপর এক বছর ঋণ পরিশোধ না করে বাকি টাকা ১০ বছরের মধ্যে পরিশোধের সুবিধা।
এছাড়া,দেশে অর্থ ঋণ আদালত আইন ও দেউলিয়া আইনের মধ্যে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে বেশ কিছু ফাঁকফোকর রয়ে গেছে। ঋণ খেলাপিদের জন্য তা টিকে থাকার সুযোগ করে দিচ্ছে।
দেশের ব্যাংক থেকে এই বিপুল পরিমাণ ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া পদক্ষেপেও কাজ হচ্ছে না। অনেকের মতে, ঋণ আদায়ের জন্য সরকারকে যেভাবে কঠোর ভূমিকা নেওয়া দরকার, তা নিচ্ছেন না। ফলে বন্ধও হচ্ছে না ঋণ খেলাপির পরিমাণ। আর এভাবে চলতে থাকলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের গোট অর্থনীতির ওপর পড়বে, যা কখনোই উন্নয়নশীল দেশের মঙ্গল বয়ে আনবে না।
আরও পড়ুন :