সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছে :
মঙ্গলবার, এপ্রিল ১৬, ২০১৯ ১১:২৬:২২ অপরাহ্ণ
বন্দর জেটিতে ভিড়ানো বাণিজ্যিক জাহাজের খালাস-বোঝাই বন্ধ
মাসুদ রানা রেজা, মোংলা প্রতিনিধি:
মোংলায় ১১ দফা দাবিতে সোমবার রাত ১২টা ১ মিনিটে শুরু হয়েছে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা কর্মবিরতী। শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা কর্মবিরতীর পক্ষে সমর্থন দিয়ে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে ক্রিক বয়ায় অবস্থান নিয়েছে কয়েকশ কার্গো ও লাইটার জাহাজ। এর ফলে কার্যত অচল হয়ে পরেছে মোংলা বন্দর। সোমবার মধ্যরাত থেকেমোংলা বন্দরের বহিঃনোঙ্গরে অবস্থানরত ১৫টি বানিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহনের কাজ বন্ধ রয়েছে। এতে ভোগান্তি ও ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশনের মোংলা শাখার সাধারন সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ও লাইটার এসোসিয়েশনের সহ সাধারন সম্পাদক মাইনুল ইসলাম মিন্টু জানিয়েছেন, দির্ঘ দিন নৌ-যান শ্রমিকদের ন্যায্য ১১ দফা দাবি না মেনে কাল ক্ষেপন করছেন মালিক পক্ষ। এর ফলে তারা বাধ্য হয়ে ১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এজন্য মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেল ও মোংলা নদীতে পণ্য বোঝাই ও খালি কার্গো ও লাইটার জাহাজগুলো রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এ সময় পর্যন্ত অলস সময় পার করছে। তাদের সবকটি দাবি মানা না হলে কর্মবিরতী অনিদৃষ্টকালের জন্য অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের এ নেতারা।
বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ বাহারুল ইসলাম বাহার জানায়, ১৯৬৫ সালে সাবেক পুর্ব পাকিস্থান (বর্তমান বাংলাদেশ) জনাব মরহুম সাহাবুদ্দিন ড্রাইভারকে সভাপতি ও জনাব মরহুম পেয়ার আহমেদ মাষ্টারকে সাধারন সম্পাদক করে প্রথম লঞ্চ লেবার এসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। তার পর থেকে দেশব্যাপী ধর্মঘাটের মাধ্যমে ৪০ টাকার মজুরি ৮৫ টাকায় নিধারন করতে মালিকদের বাধ্য করে যে অগ্রযাত্রা শুরু করেছিল তা ১৯৭৩ সালে লাগাতার আন্দলোনে ১৯০ টাকা নির্ধারন করে। পরে ১৯৭৮ সালে সামরিক শাসনের মধ্যে আন্দলোনে ৩২০ টাকা ও ১৯৮৫ সালে স্বৈরশাসনের মধ্যে চরম জুলুম নির্যাতন কে উপেক্ষা করে ৬ দিনের লাগাতার ধর্মঘাট এর মাধ্যমে সর্বনি¤œ মজুরি ৭১০ টাকা দেয়ার কথা বলে নৌ-যান শ্রমিকদের।
১১দফা দাবীতে নৌ-শ্রমিকদের কর্মবিরতী, পশুর চ্যানেলে নঙ্গর করে আছে লাইটার জাহাজ
১৯৭৮ সালে নৌ শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষে মরহুম কাজী মহিউদ্দিন আহম্মেদ কে সভাপতি ও মরহুম প্রতাপ উদ্দিন আহমেদকে সাঃসম্পাদক করে বাংলাদেশ নৌ-যান শ্রমিক ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। তখন থেকেই মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে চলে আসছে আনন্দোলন ও কর্মবিরতীর কার্যক্রম। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম পটল জানান, নৌ-যান শ্রমিকদের এ দাবী দাওয়া আজকের নয়, এটা অনেক দিনের দাবী।
শ্রমিকদের মজুরীসহ অন্যান্য দাবীগুলো মেনে নেয়ার জন্য মালিক পক্ষ বার বার ওয়াদা করে তা পালন করছেন না। এখন নৌ-যান জাহাজের কর্মরত প্রতেক নৌ শ্রমিককে মালিকের পক্ষ থেকে খাবারের ব্যাবস্থা করা,নৌ-পথে সন্ত্রাস,চাদাঁবাজী, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার, নৌ-যান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিৎকরা, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিংপাশ, দুর্ঘটনায় মৃত কর্মস্থলে নৌ-শ্রমিকের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরন প্রদান, ২০১৬ সালের ঘোষিত বেতন স্কেলের পূর্ণ বাস্তবায়ন,মাষ্টার/ড্রাইভারদের ইনচার্জ, এনড্রোসমেন্ট ও টেকনিকাল ভাতা পুর্ন নির্ধারন, সমুদ্রবাতা ও রাত্রীকালীন ভাতা, নদীর নাব্যতা রক্ষা, নদীতে প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপনসহ ১১ দফা দাবিতে সোমবার রাত ১২টা ১মিনিট থেকে মোংলা বন্দরসহ সারাদেশে নৌযান চলাচল বন্ধ রেখে কর্মবিরতী পালন করছে নৌযান শ্রমিকেরা। এদিকে মোংলা বন্দর কতৃপক্ষে হারবার মাস্টার কমডোর এম দুরুল হুদা জানিয়েছেন, দ্রুত নৌযান ধর্মঘট প্রত্যাহার না হলে লোকসানে পড়তে হবে বন্দরের ব্যবসায়ীদের।
নৌযান শ্রমিকদের কর্মবিরতিতে মোংলা বন্দরে অবস্থানরত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস ও পরিবহন কাজও বন্ধ রয়েছে। এছাড়া মোংলা বন্দরের সঙ্গে নদী পথে দেশের বিভিন্ন নৌ বন্দরের যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ফলে বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে মোংলা বন্দরের আমদানি-রফতানিকারকরা।